Home BD Old Technology লাঙ্গল বা হাল

লাঙ্গল বা হাল

by Benu Benu

লাঙ্গল

হাল বা লাঙল একটি তৎসম শব্দ [√লঙ্গ+অল(কলচ্‌)] যা সর্বভারতীয় অঞ্চলের আদিম কৃষি যন্ত্র। এক ধরনের যন্ত্র যা সাধারণত কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। বীজ বপন অথবা চারা রোপনের জন্য জমির মাটি তৈরি করবার ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করা হয়। কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত এটি অন্যতম পুরাতন যন্ত্র। এটির প্রধান কাজ হলো মাটিকে ওলট-পাল্ট করা এবং মাটির দলাকে ভেঙ্গে দেয়া যাতে করে মাটির নিচের স্তরের পুষ্টি গুন গুলো উপরে উঠে আসতে পারে এবং একই সাথে মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্টাংশ নিচে চাপা পরে জ়ৈব সারে পরিণত হতে পারে। এটি মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে। হাল আগে সাধারণত বলদ, ষাঁড়, মহিষ অথবা ঘোড়া দ্বারা পরিচালিত হতো। বর্তমানে আধুনিকতার সাথে সাথে হালের পরিবর্তন এসেছে। ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দ্বারা জমি চাষ বার ক্ষেত্রেও হাল একটি গূরত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।

লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করার পর মই দিয়ে এবড়োথেবড়ো মাটি ঠিক করা হত এভাবেই । মইয়ের ওপর বসে থাকার মজাটা যেন অপার্থিব । ছোটবেলার এই আনন্দ কেউ পেয়ে থাকলে ভুলে যাওয়ার কথা না ।

এখন লাঙ্গলের স্থান দখল করছে ‘পাওয়ার টিলার’ আর ট্রাক্টর । এসব এখন শুধুই স্মৃতি।

লাঙলের গঠন 

লাঙ্গলের বিভিন্ন অংশ থাকে। লাঙল তৈরী হরা হয় প্রধানত কাঠ দিয়ে। গ্রামের কাঠ মিস্ত্রীরা লাঙল তৈরী করে। যে অংশ মাটি কর্ষণ করে তাকে বলা হয় ফলা। আর যে ভারী কাঠের দণ্ড দুটি বলদের কাঁধে স্থাপন করা হয় তাকে বলা হয় জোয়াল।

হাল বাওয়ার কায়দা

লাঙ্গল দিয়ে হাল-চাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন হয়। গরু টানা লাঙ্গলের দুটি অংশ থাকে। নিচের  অংশটিকে সাধারণত হাল বা লাঙ্গল বলা হয় । আর উপরে গরু বা মহিষের ঘাড়ে লাগানো অন্য অংশটিকে জোয়াল বলা হয়।

উপযোগিতা

লাঙ্গলের ফলা মাটিতে গেঁথে গিয়ে মাটিকে ওলট-পালট করে দেয়। মাটির নীচের স্তরের পুষ্টি গুণ উপরে উঠে আসে এবং মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্ট নীচে চাপা পড়ে জৈব সারে পরিণত হয়। এ ছাড়া, মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে লাঙল।যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় গৃহস্থের সব জমিতে পাওয়ারটিলার বা ট্রাকটর নেয়া সম্ভব হয় না। সেই সব জমিতে মান্দাতা আমলের লাঙল দিয়ে হালচাষ করা যায়। লাঙল-জোয়াল বলদের কাঁধে বসিয়ে হালচাষ পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব। কারণ গরুর গোবর থেকে নির্ভেজাল জৈব সার পাওয়া যায়। এই সার জমির উর্বরা শক্তি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। তাই এই পদ্ধতি কৃষকের জন্য লাভজনক ও পরিবেশ সহায়ক। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া থাকত। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো।

লাঙলের অবলুপ্তির কারণ

বাঙ্গালির চির চেনা ঐতিহ্য কাঠের লাঙল আধুনিক প্রযুক্তর আবির্ভাবে বিলুপ্তির পথে। এক সময় লাঙল ছাড়া গ্রাম-বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তায় করা যেত না। দেখা যেত খুব ভোর বেলা প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙল জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের পাচুনি লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে। চাষাবাদ শেষ করে কর্দমাক্ত শরীরে ক্ষেতের আইলে বউঠুনির নিয়ে আসা সকালের পান্তা আর কাচা মরিচ পিয়াজ দিয়ে ভাত খেয়ে নিয়েছেন কৃষক। বিশ্রাম শেষে আবার ও কৃষকের ঠাই ঠাই শব্দ শোনা যেত। গ্রাম মানেই ছিল ক্ষেতে খামারে কৃষকের লাঙল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য। এ দৃশ্য আর অহরহ দেখা যায় না।

বিশ শতকে ১৯৮০’র দশক থেকে কলের লাঙল সেই স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙল। কলের লাঙলে কায়িক শ্রম লাগে না। বাড়িতে দুটি বলদ পালতেও হয় না। ফলে মাত্র দিন যুগের ব্যবধানে হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য চাষাবাদের কাঠের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট লাঙলের প্রয়োজনিয়তা লুপ্ত হয় গেছে। আধুনিক যুগে চাষাবাদের যান্ত্রিক উপকরন আবিষ্কারের প্রভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল জোয়াল, মই ও হালের বলদ।আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কৃষি কাজে ঠায় করে নিয়েছে যান্ত্রিক যন্ত্র পাওয়ার টিলার। অতি অল্প সময়ে কৃষকের সমস্ত জমি চাষাবাদ সম্পর্ন করা যায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে।

উপকূলাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি কাজের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল

উপকূলাঞ্চলে কৃষি কাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর লাঙ্গল। যান্ত্রিক আধুনিক চাষাবাধে পাওয়ার ট্রলারের প্রসার ঘটেছে। কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা যায় বলে পাওয়ার ট্রলারের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর লাঙ্গল। কৃষিকাজের ঐতিহ্য লাঙ্গলের চাষাবাদ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

এক সময় গ্রামে জমি চাষের একমাত্র উপকরণ ছিল হস্ত চালিত গরুদিয়ে টানা লাঙ্গল। যা ছিল চাষাবাদে প্রধান কৃষিযন্ত্র এখন আর সেই লাঙ্গলের কদর নেই। এক সময় একটি ইউনিয়নে হাজার হাজার লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ হতো। আর এখন একটি ইউনিয়নে হাতে গোনা ৮-১০টি লাঙ্গল খুজে পাওয়া দূস্কর হয়ে পড়েছে। উপকূলাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল।

পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এক সময় হাজার হাজার লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষাবাদ হতো। প্রতি বাড়িতে দু’একটি লাঙ্গল ছিল। এখন একটি গ্রামে একটি লাঙ্গল খুজে পাওয়া যায় না।

 

জানা যায়, ৮০ দশকে পাইকগাছা অঞ্চলে বিলাঞ্চলে জমিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে চাষাবাদ কমে গেছে। এ ফলে লাঙ্গলের ব্যবহার দিন দিন কমতে থাকে। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম এখনো লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করেন। তিনি জানান, এ ইউনিয়নে ৮-১০টি লাঙ্গল থাকতে পারে। এরা হলো মেলেক পুরাইকাটী গ্রামের হাতেম আলী, পুরাইকাটীর নিতাই, গোপালপুর গ্রামের সফিকুল। মনিরুল আরো জানান, গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখা দূস্কর হয়ে পড়েছে। গরুর লাঙ্গল দিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে ৫০০ টাকা খরচ। আর ট্রাক্টর দিয়ে এক বিঘা জমি দুই চাষ দিতে ২৫০ টাকা খরচ হয়। গরুর লাঙ্গলের চাষে সময় বেশি লাগে আর ট্রাক্টরে সময় কম লাগে আর ট্রাক্টরে সময় কম লাগে। এতে করে জমির মালিক বা কৃষকরা  ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বর্তমানের লাঙ্গলের এক জোড়া হালের বলদের দাম কম করে হলেও ৭০ হাজার টাকা। তারপর লাঙ্গল ও জোয়াল আছে। সারা বছরে দু’এক মাসের বেশি চাষের কাজ হয় না আর বাকি দশ মাস বিনা কাজে গরু লালন পালন করতে হয়। গরুর বিচালী, খৈল ও কুড়া মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গরীব মানুষের মধ্যে গরু পোষা সম্ভব হচ্ছে না। মনিরুল আরো জানান, গরুর লাঙ্গল দিয়ে তারা কৃষি কাজ করলেও সরকারি ভাবে তারা কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এ সব কারণে এ অঞ্চল থেকে গরুর লাঙ্গল হারিয়ে যেতে বাসেছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষিতে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে। কৃষি কাজে যন্ত্রের বৃদ্ধি পাওয়ায় কম সময়ে অধিক জমি চাষাবাদ করা যায়। কিন্তু গরুর লাঙ্গল দিয়ে সঠিক সময়ে জমি চাষ শেষ করা সম্ভব হয় না। কৃষি কাজ এখন যন্ত্রিক হয়ে পড়েছে। তবে কৃষির ঐতিহ্য গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে সন্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখতে হবে। কৃষি কাজের এ ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়। সে জন্য যে সকল কৃষক এখনো গরুর লাঙ্গল ধরে রেখেছে তাদেরকে সরকারি ভাবে প্রাপ্ত কৃষি কাজে সার, বীজ অনুদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া দরকার। তাহলে এখনো টিকে থাকা কৃষি কাজে ব্যবহৃত এ ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল চাষাবাদের ঐতিহ্য হয়ে টিকে থাকবে। সময়ের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার কৃষকের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল-জোয়াল, মই ও হালের গরু এখন বিলুপ্তির পথে। প্রযুক্তির কল্যাণে কাঠের লাঙ্গলের জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে ‘কলের লাঙ্গল’। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে চাষাবাদে সময় যেমন কম লাগছে, তেমনি ফসলের উত্পাদনও বেড়েছে। কৃষকরা জানান, একসময় চাষাবাদের প্রধান উপকরণ ছিল কাঠের লাঙ্গল-জোয়াল, লোহার ফলা। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হওয়ায় কাঠের লাঙ্গল তৈরির কারিগরদের এখন দুরবস্থা। কারিগররা ধীরে ধীরে তাদের পেশা পরিবর্তন করছেন। আশির দশকের শুরুতে দেশে কৃষিতে ধীরে ধীরে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষিবিদ বিজ্ঞানীরা কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের কাজ হাতে নেন। বর্তমানে ৩০ ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর হিসাবমতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির শতকরা ৯০ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, লাগসই প্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব। বর্তমানে দেশে যেসব কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা হতে ফসলের দানা আলাদা করার কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ছোট জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলার, বড় জমি চাষে ট্রাক্টর বা হুইল ট্রাক্টর, বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্য ব্রডকাস্ট সিডার, নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য সিড ড্রিল, গভীরভাবে কঠিন স্তরের মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ড্রায়ার ধান/বীজ শুকানোর যন্ত্র, ব্যাচ ড্রায়ার-ধান, গম, ভুট্টা শুকানোর যন্ত্র, পাওয়ার রিপার মেশিন (শস্য কাটার যন্ত্র), ঝাড়ার যন্ত্র ইউনারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চাষাবাদে ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ঝাড়ার যন্ত্র ইউনার, নিড়ানির যন্ত্র ইউডার, ধান ও গম মাড়াই কল, ভুট্টা মাড়াই কল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, যশোর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সেচপামপ, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির বেশকিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা গ্রামের কৃষক রোকনুজ্জামান সবুজ ইত্তেফাককে বলেন, জমি চাষাবাদে এখন আর কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। লাঙ্গলের জায়গায় এখন ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক্টর। তিনি বলেন, কৃষিকাজের মধ্যে সবচেয়ে শ্রমনির্ভর কাজ হচ্ছে বীজ বা চারা রোপণ, আগাছা দমন ও ফসল কাটা। মৌসুমের নির্দিষ্ট সময়ে বীজ বপন, চারা রোপণ এবং ফসল কেটে ঘরে তুলতে কৃষককে বেশ সংকটে পড়তে হয়। ওই সময়ে কৃষি শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কখনো কখনো দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না। ফলে বিলম্বে বীজ রোপণের জন্য ফলন কম হয়, পোকা-মাকড় ও রোগ- বালাইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, কখনো কখনো বিলম্বে ফসল কাটা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উত্পাদিত শস্যের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আগাম ফসল বিক্রি করতে না পারার কারণে প্রত্যাশিত মূল্য থেকেও কৃষক বঞ্চিত হন। এসব থেকে রক্ষা পেতেই কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে যেমন সময় কম লাগছে, তেমনি বেশি ফসলও উত্পাদন হচ্ছে। এ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের তেলিজানা গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, কৃষাণ দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটাতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। আর ‘রিপার’ দিয়ে ধান কাটতে বিঘা প্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০০ টাকা। সময়ও লাগে কম। তিনি বলেন, গরু দিয়ে হালচাষ করতে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৭০০টাকা। আর পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করতে খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৪০০ টাকা। ট্রাক্টর দিয়ে হয় মাত্র ২৫০ টাকা। তাই তারা এসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকছেন। তবে এসব যন্ত্রপাতির দাম কমানো দরকার। কৃষিবিদরা জানান, দেশে প্রতি বছর গড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য উত্পাদিত হয়। উত্পাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত প্রায় ১৪ শতাংশ শস্য বিনষ্ট হয়, যার পরিমাণ ৪২ লাখ টন। অথচ চাষাবাদে পুরোপুরি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ১৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এতে দেশের ৫০ জেলার ২০০ উপজেলায় ৩২ হাজার খামারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষিযন্ত্রের মূল্যের ৩০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার শস্য অপচয় রোধ হবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিসিএস কৃষি এসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ এস তাসাদ্দেক আহমেদ ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, দিন দিন আমাদের জমি কমে যাচ্ছে, কিন্তু খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আমাদের যেতেই হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম মণ্ডল ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ইনস্টিটিউটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বারি উদ্ভাবিত ‘পাওয়ার টিলার অপারেটেড

সিডার’-এর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই যন্ত্রটি দিয়ে একইসাথে জমি চাষ, জমি লেভেল, সার ও বীজ দেয়া যায়।

You may also like

1 comment

Anonymous May 19, 2023 - 9:30 am

2.5

Leave a Comment