কোন সমস্যায় কী ভাবে ব্যবহার করবেন অ্যালোভেরা? অ্যালোভেরা এক ধরণের আয়ুর্বেদিক ঔষুধ। এটি অনেক রোগ নিরাময়ে করতে সক্ষম । অ্যালোভেরা এর গুণাবলীর জন্য খুব জনপ্রিয়।
অ্যালোভেরা বাংলাদেশ সাথে বহু দেশে ব্যবহৃত হয়। অ্যালোভেরা একটি রসালো উদ্ভিদ। এর পাতা কেটে দেওয়া এটিকে জেল বের করা হয়। এটি অনেক মারাত্মক রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া এটি কুষ্ঠরোগও নিরাময় করতে সক্ষম। এই নিবন্ধে আপনি অ্যালোভেরার লাভ এবং অসুবিধাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা যা বলি না কেন এর পরিচিত কিন্তু বেড়েই চলছে বহু গুণে গুণান্বিত উদ্ভিদের ভেষজ গুণে শেষ নেই এতে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন,পটাসিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড ,ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ,ফলিক অ্যাসিড ,ও ভিটামিন A, বি-6 ইত্যাদি।
অ্যালোভেরার বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera, ইংরেজি নাম Medicinal aloe, Burn plant. একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার। অ্যালোভেরা আজ থেকে ৬০০ বছর আগে মিশরে উৎপত্তি লাভ করে। ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খৃীষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অ্যালোভেরার অনেক গুণের কথা আবিষ্কৃত হয়েছে। ঘৃতকুমারী বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলো পুরু, দু’ধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে। সব রকম জমিতেই ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব, তবে দোঁআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। নিয়মিত সেচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে পানি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণতঃ শেকড় থেকে গজানো ডালের সাহায্যে এই গাছের বংশবৃদ্ধি হয়।এবার জেনে নিন অ্যালোভেরার বিস্ময়কর উপকারিতা-
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে: অ্যালোভেরার মধ্যে যে জেল থাকে তার অনেক গুণ। এই জেল নিয়মিত পানে পেটের সমস্যা দূর হবে। আর যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া সম্ভাব। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে।
পিম্পলস দূর করতে: ত্বকে অতিরিক্ত তেল থাকার কারণে ব্রণর সমস্যা দেখা দেয়। ব্রণর সমস্যা কাটিয়ে উঠতে অ্যালোভেরা জেল দিনে দুবার ব্যবহার করা উচিত। এটি করে, পিম্পল ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে শুরু করে।
ত্বকের জন্য: অ্যালোভেরা জেল ত্বক সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার জন্য খুব উপকারী। অ্যালোভেরা জেল ত্বক কে হাইড্রেটেড এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি ত্বকের পোড়া, ক্ষত, দাগ দূর করতে সহায়তা করে। এগুলি ছাড়াও এটি ত্বকের সংক্রমণও নিরাময় করে।
হার্ট সুস্থ রাখে: হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় অ্যালোভেরা। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করে: অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়।
ওজন হ্রাসে: আপনার বর্ধিত ওজন কমাতে অ্যালোভেরার রস প্রতিদিন খাওয়া উচিত। অ্যালোভেরার জুসে এমন কিছু খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্যাট কমায়। এলোভেরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে: শরীরে কোলেস্টেরল থাকা প্রয়োজন। তবে বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকার কারণে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। খারাপ কোলেস্টেরল হার্টের ক্ষতি করে। অ্যালোভেরা বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে।
দাঁতের ক্ষয় রোধ করে: অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা উপশম করে থাকে। দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: হজমশক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে। অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে: অ্যালোভেরার জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত এর জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চুলের যত্নে: চুলের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকে চুলকানি দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারবেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তাই অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতাও বেড়ে যাবে।
রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে করে: অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে দেহ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
অ্যালোভেরার অসুবিধাগুলি কী ? গর্ভবতী মহিলাদের এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের অ্যালোভেরার রস ব্যবহার এড়ানো উচিত। কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।