Home BD Old Education সেই যুবকের নাম, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

সেই যুবকের নাম, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

by admin

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছিলো, একটা ছেলে যদি একজন মেয়ের সাথে কথা বলতে চায়, তবে তাকে প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রক্টর অনুমতি দিলেই সে কথা বলতে পারবে। এছাড়া নয়। এমনকি তার ক্লাসের কোন মেয়ের সাথেও না।

ডিসেম্বর ১৯২৭, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছর পর। একদিন কোলকাতা থেকে একজন যুবক এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখবেন। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে সে ঘুরতে বের হলো। তখন কার্জন হল ছিলো বিজ্ঞান ভবন। ঘুরতে ঘুরতে যখন কার্জন হলের সামনে এসে পড়লো তারা, সে যুবক দেখলো দূরে একটা থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর সুতির শাড়ি পরা এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে? তখন তার বন্ধুরা বলল, এ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। তখন সেই যুবক বলে, সত্যি? আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলব। তখন সে যুবক মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য একটু এগিয়ে গেলে তার বন্ধুরা তাকে বাঁধা দেয়। বলে, না তুমি যেওনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলার অনুমতি নেই। তুমি যদি ওর সাথে অনুমতি ছাড়া কথা বলো তবে তোমার শাস্তি হবে। সেই যুবক বলল, “আমি মানি নাকো কোন বাঁধা, মানি নাকো কোন আইন।”

সেই যুবক হেঁটে হেঁটে গিয়ে সেই মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। তারপর তাকে বলল, আমি শুনেছি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। কি নাম আপনার? মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল, ফজিলাতুন্নেছা। জিজ্ঞাসা করলো, কোন সাবজেক্টে পড়েন? বলল, গণিতে। গ্রামের বাড়ি কোথায়? টাঙ্গাইলের করোটিয়া। ঢাকায় থাকছেন কোথায়? সিদ্দিকবাজার। এবার যুবক বললেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী, আপনার সাথে কথা বলে আমি খুব আপ্লুত হয়েছি। আজই সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো।

মেয়েটি চলে গেলো। এই সব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর স্যার দেখছিলেন। তার ঠিক তিনদিন পর। ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৭, কলা ভবন আর বিজ্ঞান ভবনের নোটিশ বোর্ডে হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হলো যুবকের নামে। তার নাম লেখা হলো, তার বাবার নাম লেখা হলো এবং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলো, এই যুবকের আজীবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

তারপরে এই যুবক আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। সেইদিনের সেই যুবক, বৃদ্ধ বয়সে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেন। যে যুবকটা আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করেননি, তার মৃত্যুর পরে তার কবর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেই যুবকের নাম, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

পুনশ্চ: মেয়েটি 

ফজিলাতুন্নেসা জোহা,

কবি নজরুল ওনাকে নিয়ে ‘বর্ষা বিদায়’ কবিতা লেখেন

You may also like

Leave a Comment