অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতি যেন আপন হাতে এ দেশকে মনের মতাে করে সাজিয়েছেন। বছরের ছয়টি ঋতু পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে নব নব সৌন্দর্যে বিভূষিত করে। নদীমাতৃক এ দেশের দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ গাছপালা, পাখপাখালি রূপের মাধুর্যকে আরাে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বললে বুকের মধ্যে একটি অদ্ভুত আনন্দ বাঁধে উঠে। বাংলাদেশ একটি স্বর্গের মতো, যেখানে প্রকৃতি তার সবুজের ভিত্তিতে সবকিছুই চলে আসে। এই সবুজ বনভূমি, নদী-নদীর মিলন, পাখির চিরকাল, ফুলের ভোর, বৃষ্টির রোমাঞ্চ, সবই একটি সমৃদ্ধ জীবনে পালন করে আসে।
এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশে বাস করতে হলে মানুষের চোখে ভোরের প্রথম আলোতেই আরাম পাওয়া যায়। নির্মল নদীর তীরে বসে, শহরের ধাক্কা-বাজি থেকে দূরে, এই স্থানে মানুষ প্রকৃতির সাথে একটি অব্যাহত সংলগ্নতা অনুভব করতে পারে।
বৃষ্টির মহুড়ে তারা দেখতে পারে নদীর কিনারে শান্ত সমুদ্র, সাগরের ঘুম শুয়ে এক প্রাকৃতিক সম্মেলন। বাংলাদেশে বসন্ত এসে সবুজ পাতাগুলি মাঠে খোলামেলা হয়ে আসে, সবুজ বাগানের মধ্যে বিকেলে চায়ের কাপ ধরে বসতে মনোভাব বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি দর্শনীয় অভিজ্ঞান হয়ে উঠে যা মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে। এই দেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মেশানো একটি আলাদা ভাষা রয়েছে, যা মুগ্ধ করে তোলে মানুষের মন।
সাগর-মেখলা, বন-কুন্তলা, শস্য-শ্যামলা এদেশের উত্তরে ভাওয়াল, মধুপুরগড়, গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাছ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, বিস্তৃত সুন্দরবন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একটি মহান কবিতা, যা প্রতিটি শব্দে একটি অদৃশ্য শিল্প রচে। এই দেশে আবার আছে শোকোলাতা আবৃত্তি, যা বলে, “বৃষ্টি হলো আসবের নাম, বসন্তের আসরে মেঘে মিশিয়া গড়ায় বৃষ্টির রাজা।” এখানে বৃষ্টি একটি বিশেষ অনুভূতি, একটি সৃষ্টির রহস্য, একটি অপূর্ণিম কবিতা।
এই দেশে চিরকাল থেকে প্রকৃতির সাথে একটি অদ্বিতীয় বন্ধন ছিল। লালন ফকির একবার বলতেন, “এ দেশে আমার মাতৃভূমি, মা আছে সব প্রকৃতির উৎসস্থল, আমার চিন্তা রব হোক আবলে হাসি মাতৃভূমি জমকরে তোলে।”
এই বাংলাদেশে জীবন একটি নৃত্য, একটি গীত, একটি কবিতা। এই দেশে থাকা অর্থহীন নদীরা মানুষের জীবনে অসীম প্রসার করে, কৃষ্ণচূড়ার গানের মতো। বাংলাদেশের মাটি মানুষের কাছে একটি অপূর্ণিম সান্নিধ্য।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একটি অদ্ভুত গল্প, যা প্রতি পৌষে একবার মুছে গেছে শিশির হাওয়ায়। প্রতি শহরে, প্রতি গ্রামে, প্রতি নদীতে, এই সৌন্দর্য সবতাোব তার গল্প বলে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একটি অদ্বিতীয় যোগসূত্র রয়েছে, যা মানুষকে একসঙ্গে মিলিয়ে তোলে।
পূর্বদিকে শ্ৰেণীবদ্ধ পাহাড়ের সারি যেন দেহরক্ষীর মতাে দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাজানাে চা-বাগান, বিশাল ছায়াবৃক্ষ। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী। খাল-বিল, নদ-নদী, মাঠ-ঘাট সব মিলে এ দেশকে বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের অধিকারী করেছে।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। একেক ঋতু একেক রকম ফল-ফসলের বার্তা নিয়ে আসে আমাদের দ্বারে। প্রত্যেকটি ঋতুই আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত আর বসন্ত ঋতু-পরিক্রমার এই রূপ মাধুর্য আমাদের মুগ্ধ করে।
বাংলাদেশে সৃষ্টির মহক, মৃত্যুর রহস্য, প্রেমের গল্প—সব কিছু প্রকৃতির কাছে একটি অবিস্মরণীয় সফল কাজ। এই দেশে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি আদ্ভুত সংগীত, একটি অপূর্ণিম ভাষা রচে। বাংলাদেশ একটি শতকোটি ছায়ার দেশ, যেখানে চিরকাল হৃদয় আবেগ করে, মন হর্ষ করে, তার সবুজ পৃথিবীর শিল্পী।
এই দেশে অনুভূতির রঙ একটি অদ্ভুত অসীম চক্রান্ত, যেখানে ভোরের আলোয় নিস্তব্ধ নদী গঙ্গা তার সবুজ অসীম দলবস্তু এক মুহূর্ত প্রসার করে। বৃষ্টির মহুড়ে সবুজ চারা তার অচল গতি নিয়ে বড় হয়ে আসে, সবুজ মাঠে তার আদৃশ্য কান্না ধরে তোলে।
প্রকৃতির অপূর্ণিম কবিতা, বাংলাদেশের সৌন্দর্যে অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞান তৈরি করে এবং এই অদৃশ্য বৃষ্টি নদীর ধারার মতো মানুষের জীবন প্রসারিত করে। এই দেশের মানুষ নিজেদের মধ্যে একত্রে বসে, প্রকৃতির সাথে একটি অমৃতকে নিয়ে সাজিয়ে তোলে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হচ্ছে একটি অপূর্ণিম সুজানো সাক্ষাত কারণ, এই দেশে জীবন একটি কবিতা, একটি গী
ত, একটি সৃষ্টির কাজ।
বাংলাদেশের সবুজ নিসর্গ আর বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি এ দেশের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ধর্ম-বর্ণের বিভিন্নতা সত্ত্বেও এদেশের মানুষ এক অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে পাশাপাশি বাস করে। সহজ সরল অথচ প্রকৃতির বিরূপ বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করার অসীম সাহস ও শক্তি আছে এ দেশের মানুষের মনে। প্রকৃতির বিচিত্র লীলাভূমি বাংলাদেশকে ‘রূপসী বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করা হয়।
এই রূপসী বাংলাদেশের অন্যতম এক অদৃশ্য শখ হলো তার নদী-নদীর মিলন। সবুজ জলের বস্তুতন্তু গুলি এসে মিলে গাঁথা সৃষ্টি করে, একটি রঙিন অসীম চক্রান্ত নির্মাণ করে। ইহা সোজা চলতে গিয়ে গুলি গুলি নদীর মাঝে সংঘটিত হয়ে সকালের প্রথম আলোতে এক মহোন্নত রূপ ধারণ করে। এই নদী-নদীর মিলনের মাধুর্য এক আদৃশ্য অসীম ছায়া প্রদান করে, মানুষের চোখে চোখে ভেসে যায়।
বাংলাদেশের প্রশান্ত গ্রাম্য দৃশ্য গুলি এক নতুন জীবনের আবলম্বন, প্রকৃতির সাথে একটি সান্নিধ্য যা মানুষের চেতনা জাগায়। বাগানে প্রবেশ করা যায়, আবার চারিদিকে বৃষ্টি রাতের শান্তি দান করে। ছোট নদীর পারে গোধূলি কোণে কোণে খেলা করে, মানুষের মন বাঁধে এই মাধুর্যের কান্না।
বিভিন্ন বাগান, বস্তুতন্তু, ওড়ায়ার, সম্রাটবাগান, ময়ূরবাগান – এই সব জায়গা সবুজের রংবর্ণে মিষ্টি স্বর্গের মতো অমৃতকে প্রকাশ করে। বৃষ্টির প্রেমে ভেসে যায় পুষ্পবৃষ্টি, একটি অপূর্ণিম রাতে মাঠে বিকেলে তারা দেখা যায় সূর্যাস্তের রংবর্ণিত আকাশে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে একটি অপরূপ মুহূর্ত হলো শরৎকালের সবুজ পাতাগুলির মধ্যে ভেসে যাওয়া বাতাসে। শিশির হাওয়ায়, পাহাড়ের শিখরে ফুল ফোটায়, তাদের সোঁয়ার হাওয়ায় ছিদ্র হয়ে দেখা যায় মায়ার বৃষ্টি। এটি একটি বৃষ্টিপূর্ণ দিনে একটি শিশির অদৃশ্য কলম, একটি কবিতার শিরোনাম, প্রকৃতির লেখা প্রেমে আবৃত হয়ে উঠে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধি একটি অদ্ভুত চেষ্টা, একটি কমলে বুটের মতো ফোটানো অভিজ্ঞান। প্রকৃতির কাছে আমরা এক সংবাদ শোনছি, এক চিন্তা বুঝছি – সেই সবুজ, সেই অপূর্ণিম ছায়া, সেই সূর্যাস্তের রঙ, তার মধ্যে বাংলাদেশের আত্মা বাস করে আছে।
এই সৌন্দর্যের দেশের মানুষের হৃদয় অনেকটা প্রকৃতির মতোই মধুর। এই সান্নিধ্যে জীবন করা, প্রতিটি ক্ষণই হচ্ছে একটি কবির শখ। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা, সততা, আদর্শ বিচারে এই দেশটির মানুষের চেতনা তৈরি করে এসেছে।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রঙবর্ণিত ছায়াবৃক্ষ গুলি, বনভূমির প্রকৃতির সৌন্দর্যে বোধগম্য প্রাকৃতিক স্থানের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে আসছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বিছু শান্তিনিকেতন, রঙিন বাগান, সুন্দরবন, বঙ্গোপসাগর এবং অনেক অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য আবেগভরা হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশের নদী-নদীর মিলন, বৃষ্টিপূর্ণ মহুড়ের দিন, বাগানে ফুলের মেলা, পহেলা বৈশাখের উৎসব, শীতে শীতে বিকেলে সূর্যাস্তের রং, সবুজ ঘাসের মাঝে বসন্তের এক ছোঁয়া, এই সব অদৃশ্য চিত্রে মিলিয়ে অমৃতকে রূপ দিয়েছে এই দেশের জীবনে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম, অপূর্ণিম, অদ্বিতীয়। এটি সব প্রকার ভ্রমণকারীর জন্য এক অসাধারণ স্থান, এক অদৃশ্য প্রেমের কবিতা। এই সৌন্দর্যে মেশানো একটি চেহারা, একটি প্রাচীন পৃষ্ঠভূমি, একটি অদৃশ্য সত্তা হিসেবে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।