শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ও পরিবার এর বিস্তারিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 1876 খ্রিস্টাব্দে 15 সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারত সময়কালে হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন| তার পিতৃ পুরুষের বসবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়া| নিকট মামুদপুর দেবানন্দপুর ছিল প্রকৃতপক্ষে তার পিতার মাতুলালয় | তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী তার মাতা উত্তর 24 পরগনা জেলার হালিশহরের রামধন গঙ্গোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা ছিলেন গঙ্গোপাধ্যায় |কালক্রমে ভাগলপুরে বসবাস বসবাসরত হন পাঁচ ভাই আর বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় তার দিদি অনিলাদেবী ছাড়াও প্রভাস চন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে তাঁর দুই ভাই ও সুশীলা দেবী নামে এক বোন ছিল | শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া | দারিদ্র্যের কারণে মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানের সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন বলে শরৎচন্দ্রের শৈশবে অধিকাংশ সময় এই শহরেই কেটেছে | শিক্ষাজীবন: শরৎচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সের সময় তার পিতা মতিলাল তাকে দেবানন্দপুর এর প্যারি পন্ডিতের পাঠশালা ভর্তি করে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি দুই থেকে তিন বছর শিক্ষা লাভ করেন | এরপর ভাগলপুর শহরে থাকাকালীন সময়ে তার মামা তাকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয় ছাত্র বৃত্তি তে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল | ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগল্পুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন | এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে তার পিতা মতিলালের চাকরি চলে গেলে তিনি তার পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুর এ ফিরে আসেন শরৎচন্দ্রের জেলায় স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয় | এরপর তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হয় | কিন্তু ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে দারিদ্রতার কারণে স্কুলের ফি দিতে না পারার কারণে তাকে ওই বিদ্যালয় ও ত্যাগ করতে হয়| এ সময় তিনি কাশীনাথ ও ব্রহ্মদৈত্য নামে দুটি গল্প লিখেছেন | এভাবে অনেক চড়াই-উতরাই এরপর তার স্কুল জীবন পার করেন | পরীক্ষায় পাশ করার পর তিনি তেজ নারায়ন জুবিলী কলেজে ভর্তি হয় |এ সময় তিনি তার মাতামহের ছোট ভাই অমরনাথের দুই পুত্রদের পড়াতেন তার বিনিময়ে তার মামা তার কলেজের পড়াশোনার অর্থ যোগাতেন | এত কষ্টের পরেও তার এফএ পরীক্ষায় বসা হলোনা পরীক্ষার ফি যোগাড় করতে না পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারলেননা | এরপর থেকে তিনি খেলাধুলা ও অভিনয় করে সময় কাটাতে শুরু করেন ওই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি বড়দিদি, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা ,ইত্যাদি উপন্যাস এবং অনুপমার প্রেম, আলো ও ছায়া ,বোঝা ,হরিচরণ ইত্যাদি গল্প রচনা করেন | সময় তিনি একটি চাকরি করতেন | এভাবেই তিনি তার সময় কাটাতে লাগলেন কখনো চাকরি কখনো লেখালেখি একের পর এক ছোট ছোট গল্প এবং উপন্যাস লিখতেন তিনি| তার বৈবাহিক জীবন শরৎচন্দ্রের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে 75 টাকা মাইনে কেরানিগিরি চাকরির লাভ করেন 1905 সালের কথা রেঙ্গুনের উপকন্ঠ অঞ্চলের কলকারখানার মিস্ত্রিদের পল্লীতে বসবাস করতেন তার বাসার নিচে শান্তিদেবী নামে এক ব্রাহ্মণ মিস্ত্রির কন্যা বসবাস করতেন তাঁর পিতা তার সঙ্গে এক মদ্যপ এ ও বি এর ঠিক করলে শান্তি দেবী শরৎচন্দ্রকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করার শরৎচন্দ্র তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন | তাদের এক পুত্র সন্তানেরও জন্ম হয়, কিন্তু রেঙ্গুনের প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শান্তি দেবী ও তার এক বছরের সন্তান মৃত্যুবরণ করেন। এর অনেক কাল পরে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে কৃষ্ণদাস অধিকারী নামে এক ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তির অনুরোধে তার ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মোক্ষদার নাম রাখেন হিরন্ময়ী দেবী। তারা নিঃসন্তান ছিলেন।১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তার যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধানচন্দ্র রায়, কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল দশটায় শরৎচন্দ্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রকাশিত কিছু বই উপন্যাস
[সম্পাদনা] বড়দিদি, ১৯১৩
বিরাজবৌ, ১৯১৪
বিন্দুর ছেলে, ১৯১৪
পরিণীতা, ১৯১৪
পন্ডিতমশাই, ১৯১৪
মেজ দিদি, ১৯১৬
পল্লী-সমাজ, ১৯১৬
চন্দ্রনাথ, ১৯১৬
বৈকুন্ঠের উইল, ১৯১৬
অরক্ষণীয়া, ১৯১৬
শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, ১৯১৭
নিষ্কৃতি, ১৯১৭
দেবদাস, ১৯১৭
চরিত্রহীন, ১৯১৭
কাশীনাথ, ১৯১৭
দত্তা, ১৯১৮
স্বামী , ১৯১৮
শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, ১৯১৮
ছবি, ১৯২০
গৃহদাহ, ১৯২০
বামুনের মেয়ে, ১৯২০
দেনা পাওনা, ১৯২৩
নব-বিধান, ১৯২৪
পথের দাবী, ১৯২৬
শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, ১৯২৭
শেষ প্রশ্ন, ১৯৩১
শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, ১৯৩৩
বিপ্রদাস, ১৯৩৫
শুভদা, ১৯৩৮
শেষের পরিচয় ,১৯৩৯
নাটক
ষোড়শী, ১৯২৮
রমা, ১৯২৮
বিরাজ বউ, ১৯৩৪
বিজয়া, ১৯৩৫
গল্প
রামের সুমতি ১৯১৪
পরিণীতা, ১৯১৪
বিন্দুর ছেলে, ১৯১৪
পথ-নির্দেশ, ১৯১৪
মেজদিদি, ১৯১৫
আঁধারে আলো ১৯১৫
দর্পচূর্ণ ১৯১৫
বৈকুণ্ঠের উইল, ১৯১৬
অরক্ষণীয়া, ১৯১৬
নিষ্কৃতি, ১৯১৭
কাশীনাথ, ১৯১৭
স্বামী, ১৯১৭
একাদশী বৈরাগী
ছবি, ১৯২০
বিলাসী, ১৯২০
মামলার ফল, ১৯২০
হরিলক্ষ্মী, ১৯২৬
মহেশ, ১৯২৬
অভাগীর স্বর্গ, ১৯২৬
অনুরাধা, ১৯৩৪
সতী, ১৯৩৪
পরেশ, ১৯৩৪
প্রবন্ধ
নারীর মূল্য
তরুণের বিদ্রোহ, ১৯১৯
স্বদেশ ও সাহিত্য, ১৯৩২
স্বরাজ সাধনায় নারী
শিক্ষার বিরোধ
স্মৃতিকথা
অভিনন্দন
ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য
গুরু-শিষ্য সংবাদ
সাহিত্য ও নীতি
সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি
ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
previous post